ক্লাস নাইন পর্যন্ত আমার জীবনের একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল ক্রিকেট। বিকেল মানেই মাঠে যাওয়া, ব্যাট-বল হাতে সময়কে ভুলে যাওয়া। শুরুটা ছিল টেপটেনিস বল দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা খেলা, ঝগড়াঝাটি, হাসি-কান্না, আর প্রতিযোগিতার উত্তেজনা। তখন মনে হতো, ‘আহা! কবে যে ক্রিকেট বল দিয়ে খেলতে পারবো!’
এই স্বপ্নকে একটু বাস্তবে ছোঁয়ার জন্য আমরা, মানে আমি আর আমার কয়েকজন বন্ধু, ক্লাস সেভেনে থাকাকালীন সাহস করে কিনে ফেলি ক্রিকেট খেলার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম- ক্রিকেট বল, গ্লাভস, গার্ড, হেলমেট, লেগ প্যাড, ব্যাগ সবকিছু। আমরা একটা নামও দিই আমাদের টিমের—Ranger XI। আমাদের দল ছিল সত্যিকারের এক ফ্যান্টাসি টিম, যাদের কোনো কোচ ছিল না, ছিল না পেশাদার মাঠ, কিন্তু ছিল একরাশ ভালোবাসা আর নির্ভেজাল আনন্দ।
প্র্যাকটিস হতো সপ্তাহে দুই দিন। মাঠে যাওয়ার আগে আমরা নিজেরা একটা নোটবুক নিয়ে বসে টিম লাইনআপ ঠিক করতাম। কে ওপেন করবে, কে বোলিং করবে, কে উইকেট কিপিং করবে। সব লিখে রাখতাম। আজও সেই নোটবুকটা আছে, পাতাগুলো একটু ছেঁড়া, একটু বিবর্ণ, কিন্তু তার ভেতরে যে সময়টা বন্দী তা একেবারে অমলিন।
এই ঈদে গ্রামে গিয়ে হঠাৎ পুরোনো ব্যাগটা চোখে পড়ল। ভেতর থেকে একে একে বের করে রাখলাম সব সরঞ্জাম- লেগ প্যাড, গ্লাভস, হেলমেট, গার্ড, এমনকি সেই পুরোনো টিম লিস্টসহ ছোট্ট নোটবুকটাও। সব দেখে যেন থমকে গেলাম। যেন হঠাৎ আমি আবার সেই ক্লাস সেভেনের আমি হয়ে গেছি- যার একমাত্র চিন্তা ছিল ঠিকঠাক ব্যাটে টাইমিং করা আর নিজের বোলিং অ্যাকশনটা আরও উন্নত করা।
ক্রিকেট তখন শুধু খেলা ছিল না, ছিল বন্ধুত্বের নতুন সংজ্ঞা, ছিল বিকেলের নিঃশর্ত ভালোবাসা। প্যাড পরে ব্যাট হাতে মাঠে নামা, বন্ধুর চিৎকার করে দেওয়া “বা পাশে ফিল্ডার দে!” অথবা ক্লান্ত হয়ে গিয়ে মাঠের এক কোণে বসে আড্ডা দেওয়া- এই সবকিছু এখন শুধু স্মৃতির অ্যালবামে। কিন্তু সেই ব্যাগটা, সেই সরঞ্জামগুলো, সেই নোটবুকটা সবই এখনো আছে, এক নিঃশব্দ সাক্ষী হয়ে।
আজ যখন নিজের পুরোনো ব্যাগটা খুললাম, তখন আসলে শুধু সরঞ্জামগুলো দেখিনি। আমি আমার শৈশবকে ছুঁয়ে দেখলাম, আমার এক নিঃশব্দ আনন্দকে চোখে দেখলাম। হয়তো আর কখনো সেইভাবে মাঠে নামা হবে না, কিন্তু এই স্মৃতি, এই ক্রিকেটের সরঞ্জামগুলো চিরকাল আমার হৃদয়ে রয়ে যাবে।


#শৈশব #ক্রিকেট #RangerXI #স্মৃতিরব্যাগ #FahimMuntashirStories
Leave a comment
Your email address will not be published. Required fields are marked *